এই সরকারকে সরানো ফরজ হয়ে গেছে: ফখরুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    25-06-2023    98
এই সরকারকে সরানো ফরজ হয়ে গেছে: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা পরিষ্কার করে বলছি, এই সরকার বৈধ নয়। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আর ভোটতো দিতেই পারবো না। তাই একে সরানো এখন ‘ফরজ’ হয়ে গেছে।

বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। গোটা দেশের মানুষও চায়, অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিদেশিরাও বলছে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। ওইজন্য স্যাংশন দিয়ে দিয়েছে র‌্যাবের ওপরে। এটা আমাদের জন্য খুব একটা আনন্দের কথা নয়।’

শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের আয়োজনে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়। তিনি বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করে জনগণের স্বপ্ন সুন্দরভাবে গড়তে হবে।

বিএনপির সাত শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১২ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ১১ বছর আগে এই হাসিনা সরকারের সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফিরোজ খান, মিরাজ খানকে তুলে নিয়ে গেছে।

শুধু এই দুজনই নয়, আমাদের সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে তারা গুম করেছে। আমাদের ইলিয়াস খান ২০১২ সালে যখন গুম হয়ে যায়, তার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। এখন ১৭-১৮ বা তার বেশি বয়স হয়ে গেছে তার। কিন্তু এখনো সে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে, এই বুঝি তার বাবা ফেরত আসলো। এই ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকার আজ শিশুদের পিতৃহারা করেছে, মায়েদের সন্তানহারা করেছে, স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ গোটা দেশে এই আওয়ামী লীগ, অবৈধ সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ১৪-১৫ বছর ধরে ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন করে জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। তারা লুট করবে, চুরি করবে, পাচার করবে বিদেশে এবং ক্ষমতাকেও পাকাপোক্ত করে রাখবে।’

সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) নাকি নির্বাচন করে? তাদের অধীনে নাকি ভালো নির্বাচন হয়? কদিন আগে বরিশাল সিটি নির্বাচন হলো। আবার সেই একই ইভিএমকে ব্যবহার করলো আর আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্ধেয় মানুষ, চরমোনাই পির সাহেব, তাকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করলো না। আমরা ঘৃণা জানিয়েছি। অথচ ইলেকশন কমিশনার সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করেছে, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? এমন ইলেকশন কমিশন বানিয়েছে এই শেখ হাসিনার সরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোট দিয়ে একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করি, যিনি পার্লামেন্টে গিয়ে আমাদের কথা বলবেন, আইন পাস করবেন, দেশের মানুষ সুখে-সমৃদ্ধিতে থাকবে। আর এরা সবাইকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রেখে নিজেরা সিল-ছাপ্পর মেরে, আগের রাতে ভোট করে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট করে বলে ভোট হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি। তারা এমনটা করে কেন জানেন? তারা জানে, সত্যিই যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, নিজের ইচ্ছাকে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। সবাইকে পালাতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুদিন আগে দেখলাম সুইস ব্যাংকে নাকি বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা হচ্ছে। আবার হঠাৎ করে দেখলাম, অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যখন সুইজারল্যান্ড গেলেন, পত্রিকায় দেখলাম সেই সুইস ব্যাংক থেকে নাকি বাংলাদেশের টাকা উধাও হয়ে গেছে। আমি জানি না, এটার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র আছে কি না। আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ জানে, এরা হচ্ছে চোর। শুধু ভোট চোর নয়, এরা আমাদের পকেটও কাটে। অর্থাৎ এরা পকেটমারও।’

তিনি বলেন, ‘এই বরিশালে আজ দেখলাম, পরপর চারবার বিদ্যুৎ চলে গেলো। এত বিদ্যুৎ গেলো কোথায়? সেগুলো কি আপনারা গিলে ফেলেছেন? এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য চুরি করা, ডাকাতি করা। আর চুরি-ডাকাতি করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনো কিছু আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। যারা চুরি করে তাদের আছে। যারা টিনের ছাপরায় থাকতো, তারা এখন ১০ তলা বিল্ডিংয়ে থাকে। আর যারা সাইকেল চালাতো তারা বিরাট বিরাট গাড়িতে ঘোরে। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন মানুষ শান্তিতে থাকবে না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে পাঁচ বছরের ওপর আটক করে রেখেছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। এটা অবিশ্বাস্য যে, একটি গণতান্ত্রিক দলের ৪০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা রয়েছে।’

বরিশাল বিভাগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এতে বিশেষ বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন।

এসময় বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়-এর আরও খবর