সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিএনপি

  বিশেষ প্রতিনিধি    26-07-2023    96
সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিএনপি

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামীকাল (২৭ জুলাই) রাজধানীর মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়ার কথা ভাবছেন বিএনপি নেতারা। সঙ্গে থাকছে ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচি। তবে শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি নিয়ে সরকার হার্ডলাইনে গেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিএনপি কর্মসূচি ঠিক করবে। বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। একই সাথে আন্দোলনে ঢাকা ৩৫ দলের নেতারাও নতুন কর্মসূচি ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার তারা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম ঘটাবেন। শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।

দলীয় সূত্র জানায়, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার চারটি প্রবেশ দ্বারসহ নয়াপল্টনে একযোগে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় বিক্ষোভ সমাবেশ বা মিছিলসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। আলটিমেটাম শেষ হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা হবে। তবে এখন আর হলিডে তে নয়, অফিস ডেতেই এক দফার আন্দোলন চলবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক এবং দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জাগো নিউজকে জানান, ২০১৮ সালের পরে দলের পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

জানা গেছে , মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় নয়াপল্টন ও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন দায়িত্বশীল নেতারা।

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা পৃথকভাবে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কারা কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন সেই তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সদস্য সচিব করে মহাসমাবেশের উপ-প্রস্তুতি কমিটি করেছে বিএনপি।

সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়কদের রাখা হয়েছে। মির্জা আব্বাসের বাসায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নেতাকর্মীদের নিয়ে আগেভাগেই মহাসমাবেশস্থলে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত স্থান ত্যাগ না করতে নির্দেশনা আসে প্রস্তুতি সভায়। কর্মসূচির বিষয়ে এরইমধ্যে দলীয়প্রধান খালেদা জিয়াকে অবহিত করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসমাবেশের আগের দিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গেও বিএনপি নেতারা বৈঠক করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, এবারের মহাসমাবেশ ঘিরে নতুন দিক রয়েছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে প্রথমবারের মতো খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছাড়া দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একই দিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। মহাসমাবেশের আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য নেতাকর্মী এবং জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক সারা ফেলেছে। মহাসমাবেশ ঘিরে প্রথমবারের মতো প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব বিবৃতি দিয়েছেন। দল এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ইউনিটের বাইরে ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের তাদের অনুসারী শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত কয়েকদিনে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এসব জনপ্রতিনিধিকে ফোন করে মহাসমাবেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।

সমাবেশ এবং মহাসমাবেশের পার্থক্য প্রসঙ্গে রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, সমাবেশ হয় নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে। আর এটা হবে জাতীয়ভাবে যেটাকে আমরা মহাসমাবেশ বলছি। সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মী সমর্থক সাধারণ মানুষ এ মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।

মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার বলেন, ক্ষমতাসীনদের যুব সংগঠনের ২৪ তারিখের সমাবেশ তারা ২৭ তারিখে এনেছে সেই সাথে তাদের আরও দুটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠন এতে যুক্ত হচ্ছে এটা স্পষ্ট একটা সংঘাতের উসকানি, এটা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে, প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক নেতা জানান, মহাসমাবেশ ঘিরে এরই মধ্যে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশ থেকে ঢাকার রাস্তায় বসে পড়বে। অথচ এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা দলের নেই। বসে পড়ার সামর্থ্যও এই মুহূর্তে নেই। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা এসে গরমের মধ্যে সমাবেশ শেষ করে খুবই ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাছাড়া অবস্থান করার মতো যে কাঠামো লাগে সেই পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। থাকা-খাওয়া গোসল এরকম সুবিধা থাকলে বসে যাওয়ার কথা ভাবা যেত। তাছাড়া এখনই বসে গেলে ক্লান্ত নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিপক্ষের ভয়াবহ আঘাত আসতে পারে বলেও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

মহাসমাবেশ ঘিরে ৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এসব এলাকা থেকে তুলনামূল কম বেশি নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।

অন্যদিকে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ,সুনামগঞ্জ, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম থেকে তুলনামূলক কম সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকার কর্মসূচিতে যোগ দেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিংকং বলেন, মহাসমাবেশ সফল করতে এরই মধ্যে আমাদের দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রচার প্রচারণা চলছে লিফলেট বিলি করছি মাইকিং করবো। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আশা করছি আমাদের দাবি আদায়ের আরেক ধাপ পার হবে। এবং পরে লাগাতার কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনম সাইফুল বলেন ,ইতিহাসের সর্বোচ্চ জনসমাগম হবে মহাসমাবেশে। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি চলছে।

প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীনরা সংঘাত সৃষ্টি করছে দাবি করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের সহযোদ্ধারা প্রাণ হারিয়েছেন। আরও প্রাণ হারাতে হলেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকবো।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক যদি বড় ধরনের চাপ তৈরি করা না যায়, তাহলে পরিবর্তন আসে না। এ কারণেই রাজধানীর দিকে মনোযোগ থাকবে এবং এ কারণেই মহানগরের ওপর গুরুত্ব বেশি। সেভাবেই বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে যে, ঢাকা ও আশেপাশের জায়গাগুলো থেকে যাতে তাদের নেতাকর্মীরা বেশি করে আসেন এবং মূলত মহানগরের ওপরে জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি যাতে এখানকার প্রস্তুতিতে আটঘাট বেঁধে নামা হয়।

তিনি বলেন, কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ যাতে বাড়ে সেটার জন্য এ কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মহাসমাবেশ থেকে কর্মসূচি আসবে। এরই মধ্যে এক কর্মসূচি শেষে আরেক কর্মসূচিতে গেছি আমরা। এবারও সেরকম হবে।

মহাসমাবেশের পরই অবস্থান নেওয়া বা বসে পড়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো গুজব। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ২৭ জুলাই জনতার ঢল নামবে। যতদিন পর্যন্ত সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে আন্দোলন করে যাব।

বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা বিএনপিকে দায়িত্ব দিয়েছি তারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সেটাই আমরা পালন করব। আমরা কর্মসূচি পালনের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের অনুমতি যদি দেওয়া না হয় আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

জাতীয়-এর আরও খবর