সীমান্তে মিয়ানমারের মাইনে প্রাণ গেলো রোহিঙ্গা কিশোরের

  বিশেষ প্রতিনিধি    03-10-2022    142
সীমান্তে মিয়ানমারের মাইনে প্রাণ গেলো রোহিঙ্গা কিশোরের

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে নো ম্যান্স ল্যান্ডে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাবার নাম মো. আয়ুব। রবিবার (২ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে ওইখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় লাশের উদ্ধার ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি আবদুর রহিম। তিনি বলেন, ‘শূন্যরেখার বাসিন্দা ওমর ফারুক ও মো. আবদু ইয়্যা নামে দুই রোহিঙ্গা সকালে তুমব্রু সীমান্তের পাহাড়ি ছড়ায় মাছ শিকারে বের হয়। এ সময় সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর (বিজিপি) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুকের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যু হয়। তবে এ ঘটনায় আবদু ইয়্যা নামে আরেক জন প্রাণে রক্ষা পায়। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।’ সীমান্তে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকতা বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, ‘মাইন বিস্ফোরণের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’ এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিস্ফোরণে মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। তার আগের দিন (১৬ সেপ্টেম্বর) তুমব্রু সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে থাইন চাকমা নামে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হন। এ ঘটনায় আরও ছয় জন আহত হন। গত পাঁচ বছর ধরে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত চার হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে। শূন্যরেখার এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব পুঁতে রাখা মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয় জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন। এছাড়া সম্প্রতি মাইন বিস্ফোরণে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ রবিবার সকালে মাইন বিস্ফোরণে ক্যাম্পের আরও এক রোহিঙ্গা মারা যান। তবে গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত শান্ত অবস্থায় রয়েছে। তবু শূন্যরেখার রোহিঙ্গা সব সময় আতঙ্কে থাকেন।’ প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এই যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় চারটি মর্টারশেল এসে পড়েছিল তুমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায়। এ ঘটনায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে ডেকে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। বাংলা ট্রিবিউন

সারাদেশ-এর আরও খবর