শুরু হয়েছে নতুন আলু উত্তোলন, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

  বিশেষ প্রতিনিধি    17-03-2024    29
 শুরু হয়েছে নতুন আলু উত্তোলন, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

পঞ্চগড়ে মৌসুমের নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। ক্ষেত থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার মৌসুমে আলুতে দাম থাকলেও প্রত্যাশিতভাবে কম উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় আলুর বাম্পার ফলন না মিললেও বাজারের দামে খুশি তারা। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবেন বলে এমনই প্রত্যাশা করছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জানা গেছে, জেলায় এবার আলু চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএডিসি, ব্র্যাক সীড, শাপলা সীড, স্ক্যায়ার সীড, এসিআই সীড, বোম্বে সীডের আলুর উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে জেলা সদর, দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, একরের পর একর জমি থেকে কৃষকেরা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লাঙ্গল টেনে আলু তুলতে দেখা যায় অনেককেই। শত শত নারীকে একত্রে হয়ে আলু উত্তোলন করতে দেখা যায়। তাদের কেউ কেউ আলু কুড়াচ্ছেন আর কেউ ঠেসে ঠেসে বস্তা ভরছেন। কোথাও ডিজিটাল মিটারে চলছে ওজন। ক্ষেতের মাঝে বস্তায় ভরা আলু ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আলু তোলার এমন দৃশ্য জেলার বিস্তৃীর্ণ মাঠজুড়ে।

আলু উত্তোলন ঘিরে তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান। আলু তুলে নারীরা পেয়েছেন কাজ। পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে আলু তুলে দিন শেষে তাদের মজুরি আসছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। নারী শ্রমিকরা জানান, আলু আবাদকে কেন্দ্র করে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতি একর ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে আলু তুলছি। এতে করে দিন শেষে আলু তুলে যা আসে তা দিয়ে সংসার চলে যায়।

বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে জানা যায়, বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। বীজ আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫/৪০ টাকা দরে। এমন দাম থাকলে চাষিরা আলুতে লাভবান হতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন। আলুর পাইকাররা জানান, বাজার ও কৃষকের ক্ষেত থেকেও আলু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আড়তে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বোদা উপজেলার নয়াদিঘী গ্রামের আলু চাষি রথিন বলেন, আমি ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। বর্তমানে আলুর বাজার দাম যদি থাকে তাহলে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার আলু চাষি নুরে আলম বাবু বলেন, আমি পঞ্চগড়ের চিনিকল থেকে ৩০ একর জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছি। প্রত্যাশিতভাবে ফলন কম। তবে বাজার ভালো আছে। ক্ষেতগুলোতে আলুর তোলার জন্য লোক লাগিয়েছি। প্রতি একর আলু তুললে ১১ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আমার এখানে অনেক নারীরাও আলু তুলতে কাজ করছেন। বাজার ভালো থাকলে লাভবান হতে পারব।

দেবীগঞ্জের টেপ্রীগঞ্জ এলাকার জিয়া ইসলাম বলেন, আমি এ এলাকায় ৩ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর দাম আছে। তবে প্রত্যাশিতভাবে ফলন পাইনি। তবে আশা করছি দাম পেলে লাভবান হবে পারব।

দেবীগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার নাঈম মোরশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছর আমাদের দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আবাদ ভালো হয়েছে। বাজারে আলুর দাম পেয়ে চাষিরাও খুশি। ফসল ফলাতে সব সময় কৃষি অফিস তাদের পাশে রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে সরকার কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দিচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। ভালো ফলন হয়েছে। চাষিরা লাভবান হবে। পরিবেশ অনুযায়ী ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধকরণসহ আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরামর্শ প্রদান করছেন। আশা করছি চাষিরা আলু উৎপাদনে লাভবান হবেন।

সারাদেশ-এর আরও খবর