সমকামিতায় বাধ্য করায় আ.লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে খুন করে আশরাফুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-08-2023    123
সমকামিতায় বাধ্য করায় আ.লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে খুন করে আশরাফুল

সমকামিতায় বাধ্য করায় আ.লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে খুন করে আশরাফুল, এমনটি জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আশরাফুলকে আটক করার পর সরল স্বীকারোক্তিতে সব তথ্য প্রকাশ করেছে। তার দেখানো জায়গা থেকে ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেক তথ্য দিয়েছে, তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খু তদন্ত করেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কোন নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হবে না।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বেলা দুইটায় এসপির কনফারেন্স হলে প্রেস ব্রিফিং ডেকে ঘটনার বিষয়টি খোলাসা করেন মো. মাহফুজুল ইসলাম।

সোমবার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের আবাসিক হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিন (৪৫) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যে ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা কক্সবাজার’ ছিল। ঘটনার মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে পুলিশের ক্রাইমসিন টিম কাজ করে। অন্যান্য তদন্ত সংস্থা সক্রিয় ভূমিকা রাখে। তাই সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পালকি পরিবহন থেকে আশরাফুলকে আটক করে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এরপর ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং ডাকে জেলা পুলিশ।

সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বলাৎকারের ভিডিও ধারণ ও নিজের উপর যৌন নির্যাতনের ক্ষোভ থেকেই সাইফ উদ্দিনকে হত্যা করে আশরাফুল।

তিনি বলেন, রবিবার বিকেলে শহরের বড় বাজার থেকে দেশীয় মদ ও পেয়ারা কিনে হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন সাইফ উদ্দিন ও আশরাফুল। সেখানে দেশীয় মদ পান করে বলাৎকারের এক পর্যায়ে আশরাফুলকে যৌন নির্যাতন করে সাইফ উদ্দিন। সেই ভিডিও নিজের মোবাইলেও ধারণ করে রাখে। পরে বাইকে করে গোলদিঘির পাড়ে নামিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে চলে যেতে বলে।

প্রায় এক ঘন্টা পর আশরাফুলকে আবারও ফোন করে হোটেলে ডাকে সাইফ উদ্দিন। সেখানে আবারও বলাৎকারের চেষ্টা করে।তখন এক পর্যায়ে নিজের উপর যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে হাত বেঁধে ফেলে। এরপর ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুলের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ভিকটিম ও ঘাতক পূর্বের পরিচিত। সে সুবাদে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু যখন সম্পর্কটি মোবাইলে ধারণ করে তখন ঘাতক আশরাফুল ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে হত্যার পরিকল্পনা করে। মদ খাওনোর পর চাদর দিয়ে মূখ চাপা দেয়, বেল্ট দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তারপর ছুরি দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে ভিডিও ধারণকৃত মোবাইলটা আলামত নষ্টের জন্য ভেঙে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, ভেঙে ফেলা মোবাইল, ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। এটি প্রাথমিক স্থর। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, শাকিল আহমেদ, অলক বিশ্বাস, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মিজানুর রহমান ও সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, নিহত সাইফ উদ্দিন শহরের দক্ষিণ ঘোনার পাড়ার আবুল বশরের ছেলে। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদ কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাইফ উদ্দিন। তার মৃত্যুর ঘটনা ও সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমের প্রকাশ পর থেকে চারদিকে হইচই পড়ে যায়।

মাস্টারমাইন্ড আশরাফুল কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর ইসলামপুর এলাকার হাসেম মাঝির ছেলে। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আশরাফুলকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে, তার পিতা পুরাতন রোহিঙ্গা বলে এলাকায় প্রচার আছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর