চট্টগ্রামে অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চেহারা পাল্টে গেল ভবনের!

  বিশেষ প্রতিনিধি    20-04-2023    128
চট্টগ্রামে অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চেহারা পাল্টে গেল ভবনের!

নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ঘন বসতিপূর্ণ রাজাখালী এলাকার জনতা বিল্ডিংয়ের রয়েছে দুটি অংশ। সামনেরটা চার তলা ও পেছনেরটা দুই তলা বিশিষ্ট। জয়নাল আবেদীন হেলাল নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই ভবনের পেছনের দুই তলা ভবনটি শুটকির কোল্ড স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

গত মঙ্গলবার রাত ১টার পর এই স্টোরেজে অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে দুই তলা ভবনটির বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উড়ে যায় দেয়ালসহ বিভিন্ন অংশ। ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। পরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, মূলত কোল্ড স্টোরেজ ঠান্ডা রাখতেই ব্যবহার হয় অ্যামোনিয়া গ্যাস। স্পর্শকাতর এই গ্যাস লিকেজ হয়ে পড়লে তা ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ মিনিটের দিকে প্রথমে বিস্ফোরণ ও পরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।

বিস্ফোরণের ফলে গ্যাসের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্বাসকষ্ট হয়ে অসুস্থ হয় কয়েক জন ও ধসে পড়া অংশের আঘাতে আহত হয় কয়েকজন। আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন মো. তারেক, নুর হোসেন, মো. মান্নান ও রবিন। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুর উল্লাহ আশেক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গতকাল বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পরপর রাতেই দুই তলা কোল্ড স্টোরেজটির সামনের চারতলা ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ভোরে উদ্ধার অভিযান শেষ হলে বাসিন্দারা যার যার ফ্ল্যাটে ফিরে যান। বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় রাজাখালী এলাকার গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে কিছু সময়ের জন্য ওই এলাকার লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরে বুধবার বিকেলে তা পুনরায় সচল করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ১ টা ৫ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। খবর পাওয়ার পরপর নন্দনকানন, আগ্রাবাদ ও লামাবাজার ফায়ার স্টেশনের মোট ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সার্বিক প্রচেষ্টায় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আনুমানিক এক কোটি টাকা সমমূল্যের মালামাল পুড়ে গেছে। তবে উদ্ধার হয়েছে দুই কোটি টাকার মালামাল।

লামাবাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জনতা কোল্ড স্টোরেজে অ্যামানিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল। সেখান থেকে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, অ্যামানিয়া গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পরে তা অগ্নিকাণ্ডে রূপ নেয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। তাদের প্রতিবেদনে উঠে আসবে বিস্ফোরণের কারণ।

এদিকে ঘটনা পরবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে তা অনুসন্ধান করে বের করার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখছি। যাতে মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয়। আমরা পাহারা বসিয়েছিলাম। এখনো তা রয়েছে। তিনি বলেন, ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে যাদের শুটকি ছিল তা দ্রুত বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর