এ বছরই ট্রেনে চেপে কক্সবাজার

  বিশেষ প্রতিনিধি    20-07-2023    114
এ বছরই ট্রেনে চেপে কক্সবাজার

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কপথে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে পর্যটকদের। এবার সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের সময় ঘনিয়ে আসছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালু হতে পারে। এর ফলে ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়া যাবে পর্যটননগরী কক্সবাজারে।

কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড় দিয়ে নির্মাণাধীন কক্সবাজার রেলস্টেশনটিতে গেলে চারপাশে দেখা মেলে সবুজের হাতছানি। স্টেশনের কাছেই চলছে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ। ঝিনুকের আদলে তৈরি আইকনিক স্টেশনে ঢুকেই দেখা মেলে রেললাইনটির। ইতোমধ্যে স্টেশন এলাকার রেলপথ তৈরি হয়ে গেছে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে ওভারব্রিজের কাজ। স্টেশনের প্ল্যাটফরমে ট্রেন থেকে যাত্রীরা নেমে ওভারব্রিজ দিয়ে পার হতে পারবেন রেললাইন। স্টেশনের বাইরে গোলাকৃতির চত্বর তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে স্থাপিত হচ্ছে ঝিুনক আকৃতির স্থাপনা। সেখান থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি দুটি ভাগে কাজ করছে ঠিকাদাররা। দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশের কাজ করছে সিআরইসি এবং তমা কনস্ট্রাকশন। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। কক্সবাজারে প্রকল্প এলাকায় দেখা যায় শ্রমিকরা কাজ করছেন নিরাপত্তাবেষ্টিত হয়ে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার চ্যাং ইয়ংগি প্রকল্প এলাকায় অবস্থানকালে আমাদের সময়কে বলছিলেন, এ রেলপথ নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গুণগতমান নিশ্চিত করার বিষয়টি। প্রতিটি কর্মী তাদের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে কাজ করছে। আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

জানা গেছে, ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে ২০১৮ সালের ১ মার্চ কাজ শুরু করে যৌথভাবে সিসিইসিসি ও ম্যাক্স। লট-২ অংশের কাজ করছে তারা। ইতোমধ্যে চুক্তির ২০টি সেতু নির্মাণ শেষ করে ফেলেছে। তা ছাড়া ১১৫টি কালভার্টের সব কটির কাজ শেষ। প্রতিষ্ঠানটি ব্যালাস্ট সংগ্রহ করেছে মালয়েশিয়া থেকে। ডুলহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের নির্মাণকাজ চলমান। ইতোমধ্যে ৪৯ কিলোমিটার অংশের রেলওয়ে ট্র্যাক সংযোগ করা হয়েছে।

এদিকে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত অংশের চুক্তিমূল্য ২ হাজার ৬৮৭ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী এই অংশের ১৯টি ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং ও চকরিয়াতে স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এত সব আশার কথার মধ্যে একটি অসুবিধা হচ্ছেÑ কিছু স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ঠিকাদারদের ভৌত কাজে বাধা দিচ্ছেন। নানা কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সবার ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চালুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এ বছর।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি। এটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ।

জানা গেছে, ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণে এডিবির সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে এই রেলপথ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪.৪৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত হয়। ২০১০-এর জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। বড় কথা, পর্যটন শহর কক্সবাজার আসছে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায়। এ ছাড়া সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা হবে।

তবে নবনির্মিত রেললাইনে ট্রেন চালাতে পারি দিতে হবে ৭২ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ অংশটি। ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথের সমবয়সী ৭২০ মিটার দীর্ঘ কালুরঘাট সেতুও জরাজীর্ণ। এই রেলপথ ও সেতু নির্মাণ শেষে, কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্ন রেল যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ হাজার ৭৩ টাকা। কালুরঘাট সেতু নির্মাণে লাগবে অন্তত ১৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।

১৯৩১ সালে নির্মিত এক লেনের কালুরঘাট সেতু দিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলছে। ট্রেন চলাচলের সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আবার এক লেনের সড়ক বলে উভয় দিক থেকে একই সময়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। বোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামমুখী গাড়ি চলাচলের সময় চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালীমুখী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এই সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে মাত্র ছয়বার ট্রেন চলে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালুর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত। তখন দিনে ১৮টি ট্রেন চলবে। জরাজীর্ণ হওয়ায় এই সেতু দিয়ে বর্তমানে ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। এর মধ্যেও ভালো খবরÑ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর