কক্সবাজার-৪ : আসন ধরে রাখতে সচেষ্ট আওয়ামী লীগ, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার

  বিশেষ প্রতিনিধি    14-06-2023    98
কক্সবাজার-৪ : আসন ধরে রাখতে সচেষ্ট আওয়ামী লীগ, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ইতোমধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতখ্যাত কক্সবাজারের চারটি আসনকে ঘিরেই নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সম্ভাব্য প্রার্থীসহ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় বেরিয়ে আসছে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন। কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেই হিসাব মেলাচ্ছেন বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও স্থানীয় ভোটাররা। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। এলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে ডজন খানেক নেতা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের চারটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ৪টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নে স্ব-স্ব এলাকার ভোটারদের ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগসহ নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় প্রতীকের পক্ষে সমর্থন চাইছেন, জানাচ্ছেন নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে স্ব-স্ব দলের পরিকল্পনার কথাও।

কক্সবাজার আসন-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার একটি পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ অর্থাৎ সংসদীয় আসনে এটি ২৯৭ নম্বর আসন। দেশের সর্বদক্ষিণের দুটি উপজেলা শহর নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখের বেশি।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও সরকার গঠন ব্যবস্থা দেখে জেলার এ আসনটিকে ভাগ্যবান আসন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোটাররা। কেননা প্রতিবারই যে দল সরকার গঠন করে থাকে- উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে ওই দলের টিকিট প্রাপ্ত নেতাই এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

এ কারণে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে একটি বিশ্বাস কাজ করে যে, এটি হচ্ছে সরকার গঠনের জন্য লক্ষ্মী আসন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচিত হন। আর সে দুইবারই বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও ২০০৯ সালে ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন এমপি বদির সহধর্মিণী শাহিন আক্তার বদি। তখন উল্লেখিত সময়ে চারবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ পরিচালনা করে চলেছে। সে হিসেবে কক্সবাজারের এ আসনকে (উখিয়া-টেকনাফ) ভাগ্যবান আসন বলা হয়ে থাকে।

সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী স্থানীয়দের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নিজ হাতে ও সমর্থকদের মাধ্যমে লুঙ্গি, শাড়ি, শার্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবি, সেমাই-চিনি ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দল গোছানো, উপজেলা-ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী তথা এবি পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের এমনকি স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাদের সুকৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম দেখে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ভোটের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলার ৪টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অংশগ্রহণের বিয়য়টি জানান দিচ্ছেন দলীয়, ব্যক্তিগত কিংবা সভা-সেমিনারে ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে।

এলাকার সচেতন ভোটারদের মত হচ্ছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভালো-মন্দ রিপোর্ট যাচাই-বাছাই এবং ভোটারদের আগ্রহের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নতুবা তাঁর সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি। এ আসনে ভোটারদের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপি যদি ভোটে অংশগ্রহণ করে তাহলে জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এটা এক প্রকার নিশ্চিত বলে জানা গেছে। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী ও নুর আহমদ আনোয়ারী এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, জেলার ৪টি আসনে জাসদ, বাসদ, সিপিবি, সাম্যবাদী, ১১ দল, এবি পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, এলডিপি, কল্যাণপার্টি, বিকল্প ধারাসহ অন্যান্য বহু রাজনৈতিক দলের পক্ষে কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। এসব দলের মূল প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যাচ্ছে না।

আগে বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে কক্সবাজার-৪ আসন অর্থাৎ উখিয়া টেকনাফের পরিচিতি থাকলেও আবদুর রহমান বদি এমপি হওয়ার পর থেকে এটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ভাগ্যবান এ আসনটিতে জয়লাভ করা দলটি সরকার গঠন করার একটি রেওয়াজ রয়েছে। এ আসনে অনেক প্রার্থী থাকলেও আবদুর রহমান বদির একটি শক্তিশালী অবস্থান ও জনসমর্থন রয়েছেন।

টেকনাফ প্রতিনিধি আমিনুল বাধন জানিয়েছেন, একদিকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আগমন, অন্যদিকে ইয়াবা ও মানব পাচারের স্বর্গরাজ্য হিসেবে সবসময়ই নানা আলোচনা-সমালোচনায় শীর্ষে থাকে কক্সবাজার-৪ আসনটি। মাদক নির্মূলে সরকার থেকে এখানে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হলেও মাঝে মধ্যেই আসনটি আলোচনায় উঠে আসে। নির্বাচনী আসন ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় আগ্রহী প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় তোলজোড় শুরু করেছেন প্রায় অর্ধডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আলীর পুত্র মাহবুব মোর্শেদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকাতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। এদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ এবং শাহজাহান চৌধুরীর ছোট ভাই ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী মনোনয়ন চাইতে পারেন।

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। এছাড়া এবি পার্টি থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল চৌধুরী, জামায়াতের সাবেক আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, সাংবাদিক শামসুল হক শারেক এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমীর নুর আহমদ আনোয়ারী মনোনয়ন চাইতে পারেন।

সারাদেশ-এর আরও খবর