দুদক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে এলএ শাখার ৪ সার্ভেয়ার ও ৩০ দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-08-2023    70
দুদক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে এলএ শাখার ৪ সার্ভেয়ার ও ৩০ দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় অনিয়মের বিরুদ্ধে চার সার্ভেয়ার এবং ৩০ দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন ও (দুদক) ভূমি মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযোগকারী শিক্ষানবিশ আইনজীবী এইচএম আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, এলএ শাখার দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার ও দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ করেছি। এই অভিযোগ কপি জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, ভূমিমন্ত্রী, ভূমি সচিব ও দুদকের পরিচালক চট্টগ্রাম বরাবরে দেওয়া হয়েছে।

লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সার্ভেয়ার আবদুল মোমিন, ইমাম হোসেন গাজী, জোবায়েরুল ইসলাম (জোবায়ের) ও রফিকুল ইসলামের (রফিক) সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অফিসে আসা সেবাগ্রহীতারা অতিষ্ঠ। তারা সার্ভেয়ার সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের নাম ভাঙিয়ে ২০ থেকে ৪০% শতাংশ টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে এলএ মামলার আবেদন ফাইল পাস করেন। এলএ মামলার আবেদনকারীর ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রিপোর্ট ওই সার্ভেয়ারগণ তাদের মনোনীত পাবলিক দ্বারা এলএ অফিসের বাইরের বিভিন্ন কম্পিউটার টাইপিং দোকানে বসে প্রস্তুত করেন। সার্ভেয়ারদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য রয়েছে প্রায় ৩০ সদস্যের পালিত দালালচক্র।

সরেজমিনে এলএ অফিস পরিদর্শন করার কথা উল্লেখ করে অভিযোগে জানানো হয়, সার্ভেয়ারগণ সরকারি চাকরি বিধিমালা আইন লঙ্ঘন করে প্রত্যেকে একজন করে পাবলিক দিয়ে অফিসে তাদের ব্যক্তিগত কাজ করাচ্ছেন। সার্ভেয়ারদের নিযুক্ত পাবলিকরা অনেক ক্ষেত্রে আবেদনকারীর এলএ আবেদন ফাইল জমা দেওয়া ও ফাইলের গুরুত্বপূর্ণ দলিল গায়েব করে আবেদনকারীকে ভোগান্তিতে ফেলেন। কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত নজরদারির অভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা এখন চিহ্নিত দালালদের আখড়া ও রমরমা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

দালালদের নাম উল্লেখ করে তিনি অভিযোগে জানান, ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ারদের পালিত দালালদের মধ্যে মিরসরাইয়ের শিবির ক্যাডার মোশাররফ হোসেন, বেলাল উদ্দিন, গোলাম সরোয়ার, একরাম হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, মো. নুরুচ্ছফা, ফৌজদারহাটের আনোয়ার ফারুক, টিটু মিয়া, খায়রুল ইসলাম, পতেঙ্গার মো. নোমান, ইলিয়াস হোসেন, আজিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, কম্পিউটার অপারেটর মো. রিফাত সোলাইমান, ইপিজেড এলাকার আইউব আলী, দিদারুল আলম, বাঁশখালীর নজরুল ইসলাম, চাকরিচ্যুত চেইনম্যান নজরুল ইসলাম, নেজামুল করিম, আনোয়ারার জুয়েল দত্ত, আব্দুল মান্নান, সাদ্দাম হোসেন মেম্বার, মাঈন উদ্দিন, অলংকারের আশরাফ আলী, বহদ্দারহাটের দিদারুল আলম, কর্ণফুলীর আইয়ুব আলী, বাকলিয়ার নুরুনন্নবী ও কম্পিউটার অপারেটর মো. হৃদয়ের এলএ অফিসে নিয়মিত যাতায়াত, আনাগোনা, চেক প্রদানের বিনিময়ে কমিশনের অবৈধ অর্থ লেনদেনসহ অপতৎপরতা সবচেয়ে বেশি।

এসব দালালদের ছাড়া অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে, ওই চার সার্ভেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত আবেদনকারীর এলএ আবেদন সংক্রান্ত কোনো কাজ করে দেন না। সার্ভেয়ারদের সহযোগিতায় দালালচক্রের সদস্যরা অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে অধিগ্রহণকৃত জমির দাগের পার্শ্ববর্তী তৃতীয় পক্ষের কোনো লোকজনকে দিয়ে সিভিল মামলা অথবা আপত্তি দাখিলের মাধ্যমে নিজেদের সৃষ্ট জটিলতার অজুহাত দিয়ে মোটা অংকের কমিশন দাবি করেন। পরে তাদের সৃষ্ট জটিলতা এলএওকে ম্যানেজ করে সুরাহার নামে আবেদনকারীর নিকট থেকে নগদ, আবার কখনো ব্যাংক চেকের মাধ্যমে কমিশনের টাকা আদায় করেন।

কাঙ্ক্ষিত কমিশনের ঘুষের টাকা না পেলে, তারা আবেদনকারীর ফাইলে চেক প্রাপ্তির রিপোর্ট প্রস্তুত না করে মাসের পর মাস হয়রানি করেন। এলএ মামলার আবেদনকারীকে ওই সার্ভেয়াররা তাদের মনোনীত দালালদের মাধ্যমে অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। এলএ মামলার চেক প্রত্যাশী ও আবেদনকারীগণ দীর্ঘদিন যাবত ওই সার্ভেয়ারদের হাতে জিম্মি। এলএ শাখার চিহ্নিত দালালদের সঙ্গে অফিস চলাকালীন সময়ে এবং অফিসের বাহিরে বিভিন্ন অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয় রাতে সার্ভেয়ারদের গভীর সখ্যতা দেখা যায় বলেও জানানো হয় অভিযোগে।

এছাড়া উপজেলাভিত্তিক নিযুক্ত দালালদের দ্বারা নগদ ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে অফিসের বাইরে এলএ চেক কমিশনের ঘুষের লাখ লাখ টাকা কালেকশন করেন সার্ভেয়ার আবদুল মোমিন, ইমাম হোসেন গাজী, জোবায়েরুল ইসলাম (জোবায়ের) ও রফিকুল ইসলাম (রফিক)। আর সার্ভেয়ারদের এসব দুর্নীতির বিষয়টি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) অবগত থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে তারা নির্বিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চারজন সার্ভেয়ারের স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে তাদের নিজ গ্রামে এবং চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। অভিযুক্ত সার্ভেয়ারদের ইতোপূর্বে একাধিকবার অন্যত্র বদলি করা হলেও জেলা প্রশাসক পরিবর্তন হওয়া মাত্র তদবিরের মাধ্যমে তারা পুনরায় এলএ শাখায় চলে আসেন। দীর্ঘদিন যাবত চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় চাকরি করার সুবাদে অফিসে একচ্ছত্র আধিপত্য ও কু-প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীদেরও নানাভাবে জিম্মি করে রেখেছেন প্রভাবশালী ওই চারজন সার্ভেয়ার।

ক্ষতিগ্রস্ত আবেদনকারীগণের এলএ চেক কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত সার্ভেয়ার-দালাল সিন্ডিকেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন, ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ও সরকারের সুনাম দারুণভাবে নষ্ট করছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল. এ.) মোঃ আবু রায়হান দোলন এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করাে হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সারাদেশ-এর আরও খবর