শীতের সঙ্গে ভোগান্তি বাড়িয়েছে কুয়াশা

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-01-2024    33
শীতের সঙ্গে ভোগান্তি বাড়িয়েছে কুয়াশা

কনকনে শীতের সঙ্গে ভারী কুয়াশার বিস্তৃতি ঘটছে দেশ জুড়ে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে জনজীবনে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘন কুয়াশা। মধ্যরাত থেকে সকাল অব্দি ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত হচ্ছে শহর-বন্দর-জনপদ। দিবসের প্রথম ভাগে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে অধিকাংশ এলাকায় সূর্যালোকের দেখা মিলছে না। বিমান ও নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দৃষ্টিসীমা হরণ করছে কুয়াশাচ্ছন্ন আবরণ। শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা দেশেই এখন শীতের প্রকোপ।

রাজধানীসহ সারা দেশেই ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। বেড়েছে শীতের অনুভূতি। গতকালও ভারী কুয়াশার কারণে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাত ঘণ্টা বিমান ওঠানামা বন্ধ ছিল। এতে ১৩টি ফ্লাইটের শিডিউলের বিপর্যয় দেখা দেয়। নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ফ্লাইটে চড়তে পারেননি। দেশের নদী অববাহিকা ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশায়। প্রায় রাতভর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার ব্যস্ততম নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। ১১ ঘণ্টা পর চালু হয় ফেরি। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের তাপমাত্রা কমেছে। আবহাওয়া বিশ্লেষকেরা বলছেন, আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব নদনদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকবে। চলমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। অতঃপর তাপমাত্রা খানিকটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হতে পারে।

গতকাল ছয় অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার লাভ করেছে। গতকাল দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দিনাজপুরে ৯.৫ সৈয়দপুরে ১০.৪, ডিমলায় ১০.৫, রাজারহাটে ১০.১, চুয়াডাঙ্গায় ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা গত বুধবারের চেয়ে সামান্য কমেছে। গতকাল সকালে রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি।

এদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদী অববাহিকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা কোনো কোনো স্থানে দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কুয়াশার পরিমাণ সামান্য হ্রাস পেয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্বে বেড়েছে। আজ ঠান্ডার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকবে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, রবিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সড়ক-মহাসড়কগুলো মাঝারি থেকে ভারী কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নৌযান চলাচল প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ।

দেশের সব বড় নদ-নদীতে ভারী কুয়াশার আস্তর থাকবে। রাতে দূরপাল্লার বাস-ট্রাকসহ সব পরিবহন চলাচলে গতিসীমা সীমিত করতে হবে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়কযোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলাসমূহের ওপর দিয়ে চলমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কয়েক জায়গায় হালকা ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

সারাদেশ-এর আরও খবর