কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবাগত চেয়ারম্যানের যাত্রা হোক শুভ

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-09-2022    101
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবাগত চেয়ারম্যানের যাত্রা হোক শুভ

ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম :: আমরা সবাই সময়ের যাত্রী। সময়ের যাত্রা পথ বিরামহীন। আজ থেকে ৬ বছর সময় পেছনে তাকালে স্মৃতির মনিকোঠায় সবই যেন জীবন্ত, অন্তত: আমার কাছে। কেননা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ক উ ক) এর জন্ম লগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে আমি জড়িত। তাই সঙ্গতকারণে আমাকে কউক এর বৃহত্তর স্বার্থে কিছু বক্তব্যের অবতারনা করতেই হয়। প্রকৃতির অপার দানে মহিমান্বিত কক্সবাজার। পাহাড়, টিলা, দ্বীপ, নদী, সাগর, সমতল ভূমি ও বিশে^র বিস্ময় সৈকতের বালিয়াবির অপূর্ব মিলন মেলার তীর্থভূমি কক্সবাজার। অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, নানান বর্ণ, ধর্ম, জাত-পাত মানুষের বৈচিত্রময় জীবনধারা, বহুজাতিক নৃ-তাত্বিকতা, ঐতিহ্য পুরানো স্থাপত্য-শিল্প এবং প্রাকৃতিক সম্পদে বলীয়ান বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব জেলা রূপসী কন্যা কক্সবাজার। এমন অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মহামিলন শুধু বাংলাদেশেই নয়, আমার ভ্রমণ জীবনে পৃথিবীর কোথাও দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়নি। তবে আমরা যারা এই মাটির সন্তান, অধিকাংশই এই মধুর মিলন যজ্ঞের নির্যাসকে অনুধাবন করতে অপারগ নিজস্ব বৌদ্ধিক সীমাবদ্ধতা এবং অদূরদর্শিতার কারণে। আর তাই বৃটিশ শাসন পরবর্তী পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রারম্ভেও কক্সবাজারকে প্রকৃত অর্থে বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্যকর স্থান এবং পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয়ে কক্সবাজারকে নান্দনিকতার সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও সংলগ্ন বিশেষ পর্যটন অঞ্চলকে নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা এবং বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন (৩১নং আইন) হিসেবে ঘোষিত হয়। তারই প্রেক্ষিতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০১১-২০১৩ সালে কক্সবাজারের জন্য সীমিত আকারে মহাপরিকল্পনা প্রনয়ন করে। বস্তুত: সরকার গঠনের প্রারম্ভ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ সরকারের আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সাধুবাদ যোগ্য। সুতরাং আধুনিক ও পর্যটন নগরী প্রতিষ্ঠাকল্পে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল ২০১৫’ মহান জাতীয় সংসদে ৬ই জুলাই ২০১৫ সালে পাশ হয়। তাহা ১৩ মার্চ ২০১৬ সালে মাননীয় রাষ্ট্রপতির সস্মতি লাভ করে এবং ৭নং আইন হিসেবে সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য বাংলাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। আর এভাবেই প্রকৃত কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর জন্ম। তবে উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছিলো নামে মাত্র। তার কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে। যা হোক, পরিশেষে ১১ আগষ্ট ২০১৬ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর ১ম চেয়ারম্যান হিসেবে লে: কর্ণেল (অব;) ফোরকান আহমদ, এলডিএমসি, পিএসপি নিয়োগ লাভ করেন। সঙ্গতকারণে কক্সবাজারে পৌরসভা বিদ্যমান থাকা সত্বেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ছিলো জরুরী এবং ইহা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। শুধু কক্সবাজার পৌরসভা ই নয়, জেলার বিশেষ পর্যটন অঞ্চল, শিল্প অঞ্চল, এবং জেলার অন্যান্য পৌরসভা ও সংলগ্ন অঞ্চল সমূহ কউক এর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট এলাকা হিসেবে পরিগণিত। অর্থাৎ কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, রামু ও টেকনাফের বিশেষ এলাকা সমূহ এখানে অন্তর্ভূক্ত। প্রকৃতপক্ষে (ক উ ক) মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিরিখে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আধুনিক কক্সবাজার বির্নিমানে এগিয়ে যাবে। ফলে কক্সবাজার সহ সমগ্র বাংলাদেশের আর্থ -সামাজিক ও সংস্কৃতির ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কক্সবাজর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামক সদ্যজাত প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারের ইতিহাসে মাইল ফলক। কক্সবাজারবাসীর অবগত থাকা দরকার যে, বর্তমান ক উ ক এর যাত্রা শুরু হয় মূলতঃ শূন্য থেকে। জেলা প্রশাসন থেকে দায়িত্ব গ্রহণের সময় কিছু ফাইল ও কিছু কাগজপত্র ব্যতিত ছিলো না কোন অফিস। ছিলো না চেয়ার, টেবিল, কোন অফিস সামগ্রী, গাড়ি এবং কোন জনবল। কক্সবাজারে বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোশিয়েশন) ভবনে অফিস ভাড়া করে প্রথমে ১টি প্লাষ্টিকের টেবিল এবং ৪টা প্লাষ্টিকের চেয়ার কিনে অফিসের পিয়নবিহীন যাত্রা শুরু। সাবেক চেয়ারম্যান মহোদয় ও আমরা দিন-রাত নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছি যাতে দ্রুত ভাড়াটে জনবল সংগ্রহ করে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় এবং ক উ ক এলাকার জনগণকে উন্নয়ন কাজে সেবা প্রদান করা যায়। অতি সাফল্যের বিষয় যে, কউক এর সাবেক চেয়ারম্যান লে: কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ এবং সকল সন্মানিত বোর্ড মেম্বারদের আন্তরিক ও নিরন্তর প্রচেষ্টার বদৌলতে ইতোমধ্যেই ক উ ক এ ২২০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতদব্যতিত ক উ ক এর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আরো কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বস্তুত, বিগত ৬বছরে ক উ ক এর কার্যক্রম সরকার ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে। তার প্রমাণ, ক উ ক ইতোমধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় কর্তৃক ৩টি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে। তবে করোনার দূর্যোগের ২ বছর মারাত্বকভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত না ঘটলে অলৌকিক উন্নয়ন সাধিত হতো। সত্যিকার অর্থে ক উ ক সময়ের তুলনায় অধিক অগ্রগামীতার স্বাক্ষর রেখেছে। তবে অনেক কাজের মাঝে অনিচ্ছাকৃত কিছু ক্রটি বা ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয় । সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলায়। নিদিষ্ট সময়ের পর নবাগতের আগমন স্বাভাবিক প্রক্রিয়াজাত। আমরা কক্সবাজারবাসী এই মাটির আরেক সন্তান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কমোডর মো: নুরুল আবছার এন জি পি, এন ডি সি, পি এস সি কে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সাদরে গ্রহণ করছি।তিনি একজন আত্নপ্রচার বিমুখ কর্মকর্তা। মানুষ হিসাবে সহজ, সরল ও সৎজন। যিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অতি নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করে নন্দিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাকে আগে থেকেই জানি। দেশে স্কুল ও কলেজ জীবনে পরীক্ষায় শ্রেষ্টতম স্থান অধিকার তিনি করে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমন কি যুগোশ্লাভিয়ার বিখ্যাত বেলগ্রেড ইউনিভারসিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ডির্পাটমেন্ট থেকে শ্রেষ্ট মেধাবী ছাত্র হিসাবে কৃতিত্ব অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। এতদব্যতিত দেশ- বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ র্কোসে সর্বেŸাচ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। প্রচুর দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি। উল্লেখ্য যে, তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সিএফআইএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, এন এস আই এর মহাপরিচালক এবং নৌ-সচিব এর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত ছিলেন। আমরা কক্সবাজারবাসী এমন একজন কৃতী ব্যক্তিকে পেয়ে ধন্য। পরিশেষে কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশা, চলমান প্রকল্প সমূহের কাজ অতি দ্রুত সমাপ্ত করা হবে। বিদায়ী চেয়ারম্যান তার অবদানে কক্সবাজারবাসীকে ঋণী করেছেন। তবে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে উন্নয়ন কাজে নিযুক্ত কন্সালটেন্টের অদুরর্দশীতা ও অদক্ষতার কারণে সৃষ্ট বহুবিদ সমস্যা এবং প্রশ্নের জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নহেন। আশাকরি নবনিযুক্ত মাননীয় চেয়ারম্যান সকল ধরণের দূর্নীর্তি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কক্সবাজারের উন্নয়নে তার সর্ব্বোচ মেধা,সততা, দক্ষতা ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে সেবা করবেন। সর্বোপরি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত ও আধুনিক পর্যটন নগরী কক্সবাজার বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আমরা কক্সবাজারবাসী তাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবো। আজ তাকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করছি। তার পথ চলা হোক শুভ ও সুন্দর। লেখক: সাবেক বোর্ড মেম্বার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার উপ-কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ।

সারাদেশ-এর আরও খবর