মুছাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন

ট্রলারে ১০ মরদেহ

  বিশেষ প্রতিনিধি    29-04-2023    92
 মুছাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা। তবে রহস্য উদঘাটনের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে মুছা মাঝির সন্ধান। কারণ মুছাকে ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক প্রশ্ন। তাই তদন্তকারী সংস্থাগুলো মো. মুছা ওরফে মুছা জালাল মাঝিকে খুঁজছে। তিনি জীবিত নাকি মৃত, তা জানে না পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালীর পশ্চিম কুয়াকাটার মুছা ১০ বছর আগে মহেশখালী উপজেলার দেবাঙ্গিয়াপাড়া গ্রামের বুলবুল আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেন। কক্সবাজার শহরের লালদীঘিরপাড়সহ কয়েকটি এলাকায় বসবাসের পর চলে যান মহেশখালীতে। ঘড়িবাঙ্গা, তাজিয়াকাটা, গোরকঘাটা ও সর্বশেষ হোয়ানকের হরিয়ারছাড়া এলাকার ফজলুল হকের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। মুছা মাঝি আর বুলবুল আক্তারের সংসারে তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। এটি দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।

মুছা মাঝির স্ত্রী বুলবুল আক্তার বলেন, ‘১৪ রমজান সামসু মাঝি এসে মুছাকে নিয়ে যায়। সামসু মাঝি লোক ভালো না। সেটা আমি জানার কারণে তাকে বলেছি- আমার স্বামী আপনার বোটে যাবে না। উত্তরে সামসু মাঝি আমাকে বলেছে, আমাদের ট্রলারে গেলে বউ বাচ্চাকে উপবাস থাকতে হয় না। দুই দিনের বেশি সময় লাগবে না। দুইদিন পরে আপনার স্বামী চলে আসবে। মাত্র পাঁচটি বরফ নিয়ে যাচ্ছি। এমনকি, টাকা নেওয়ার জন্য একটি দোকান ঠিক করে দেবে বলে জানান সামসু মাঝি। সেখান থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে সংসার চালানোর কথা বলেন।’

বুলবুল আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সাগরে মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো কাজ করে না। ১৪ রমজান লুঙ্গি, গেঞ্জি ও একটি গামছা নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাকে আমি আর দেখিনি।’

উদ্ধার হওয়া ১০ মরদেহের মধ্যে আপনার স্বামী আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বুলবুল আক্তার বলেন, ‘গাড়ি ভাড়ার টাকা না থাকায় কক্সবাজার যেতে পারিনি।’ তাহলে কি আপনার স্বামী বেঁচে আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে হয়ত ঈদের সময় বাড়ি আসত। কিন্তু মারা যাওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

তবে ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সামসু মাঝি ট্রলারের মালিক হলেও ট্রলারের মাঝি হিসেবে যেতেন মুছা মাঝি। সাগরে যেসব ট্রলার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এগুলোর সঙ্গে মুছার একটা যোগসূত্র আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়ানক এলাকার এক জেলে জানান, মুছা মূলত একজন জলদস্যু। সাগরে ১০ মরদেহ উদ্ধারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মুছার সন্ধান জরুরি। তাকে জীবিত পাওয়া গেলে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘১০ জন নিহতের ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি। মুছা মাঝির ব্যাপারে আমাদের থানায় কোনো তথ্য নেই। কারণ তিনি পটুয়াখালী এলাকার মানুষ। মহেশখালীতে বিয়ে করেছেন। তবে নিহতের মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলা এবং শামসু মাঝির বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যা মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মর্গে রয়ে গেছে চারজনের মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষার পর এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর