কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছে : জনমত জরিপে এগিয়ে নৌকার প্রার্থী

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-06-2023    106
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ  চলছে : জনমত জরিপে এগিয়ে নৌকার প্রার্থী

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন আজ, সোমবার। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পৌরবাসী তাদের নতুন পৌর পিতাকে বেছে নেবেন। পর্যটন নগরীর এ নির্বাচনে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বা জামায়াত ভোটের মাঠে নেই। যার ফলে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে নৌকা অনেকটাই ফুরফুরা। কারণ গত চার দিনের বিভিন্ন পর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে নৌকা প্রতীক প্রার্থী ব্যাপকভাবে এগিয়ে রয়েছেন। পৌরসভার ৪৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টির অধিক কেন্দ্রেই নৌকা মার্কা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে,১২ জুনের নির্বাচনে কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৯৫ হাজার ৮১১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন।জন। ৪৩টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এই পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন মোট ৫ জন প্রার্থী। আর কমিশনার প্রার্থীর সংখ্যা ৭৪ জন।

প্রার্থীদের সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে শনিবার রাত ১২টা থেকে। শহরের সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫ প্লাটুন বিজিবিসহ র‌্যাব, পুলিশ,আনসার ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিস (ইসি) ইতোমধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি নিয়েছে। রবিবারই পৌরসভার সব কেন্দ্রে নির্বাচন সামগ্রী ও ইভিএম পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

মেয়র পদের জন্য পাঁচজন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন তারা হলেন-

আওয়ামী লীগের মাহবুবুর রহমান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাশেদুল হক রাশেদ (নারকেল গাছ),ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের জাহেদুর রহমান (হাত-পাখা), জোসনা হক (মোবাইল ফোন) ও জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট) প্রতীক।

১২টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য তথা কাউন্সিলর পদে যারা লড়ছেন তারা হলেন-

১ নম্বর ওয়ার্ডে এসআইএম আকতার কামাল আজাদ (পান্জাবী),জাহিদুল ইসলাম (ডালিম), মোঃ রিয়াজ উদ্দিন (উটপাখি), মোঃ আতিক উল্লাহ (ব্লাক বোর্ড), রাহমাত উল্লাহ (গাজর), আব্দুল মান্নান (টেবিল ল্যাম্প)।

২ নং ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান (পানির বোতল),এম. জাফর আলম হেলালি (ব্লাক বোর্ড), মোঃ সাহাব উদ্দীন( উটপাখি) শাহেদুল আলম (পান্জাবী), ফাতেমা শারমিন (টেবিল ল্যাম্প)। ৩ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাসান (টেবিল ল্যাম্প),কলিম উল্লাহ (ডালিম), মিঠুন কান্তি দাশ( ব্লাক বোর্ড, আমিনুল ইসলাম মুকুল (উটপাখি), আবু আদনান সাউদ (পান্জাবী)।

৪ নং ওয়ার্ডে মিজানুল করিম (টেবিল ল্যাম্প),আবদুল গাফফার (গাজর), মোঃ আবদুল মাজেদ (উটপাখি), এহেছান উল্লাহ(ব্লাক বোর্ড), মোঃ দিদারুল ইসলাম (ব্রীজ), আব্দুল্লাহ আল মামুন রিয়াদ (পান্জাবী), শামসুল আলম (ফাইল কেবিনেট), ওমর ফারুক (ডালিম), সিরাজুল হক (পানির বোতল)।

৫ নং ওয়ার্ডে গোলাম আরিফ লিটন (উটপাখি),সাহাব উদ্দিন সিকদার (টেবিল ল্যাম্প), মামুনুর রশিদ (ব্রীজ), মো: তাহের আলম (ব্লাক বোর্ড), মোহাম্মদ জীবন (পান্জাবী)। ৬ নং ওয়ার্ডে ওমর সিদ্দিক (ডালিম), ফজল করিম (পান্জাবী), মো: জাবেদ মোস্তফা (উটপাখি), মো: জসিম উদ্দিন (টেবিল ল্যাম্প)।

৭ নং ওয়ার্ডে আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকি জামশেদ(টেবিল ল্যাম্প),ওসমান সরওয়ার টিপু (ব্রীজ),জাফর আলম (পান্জাবী),সাফায়াত কামাল সৌরভ (উটপাখি),শামশুল আলম (ডালিম),মো: জাহেদুল হক(ব্লাক বোর্ড)।

৮ নং ওয়ার্ডে রাজ বিহারী দাশ( উটপাখি), বেলাল হোসেন (পান্জাবী), উজ্জল কর( টেবিল ল্যাম্প)।

৯ নং ওয়ার্ডে হেলাল উদ্দীন (উটপাখি),জাহেদুল ইসলাম জাহেদ (টেবিল ল্যাম্প),আবু ওবায়েদ্দীন নাছের (ডালিম)।

১০ নং ওয়ার্ডে সালাহ উদ্দিন সেতু (উটপাখি), আবছার কামাল (টেবিল ল্যাম্প)।

১১ নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম (উটপাখি),নুর মোহাম্মদ (ডালিম), মো: সেলিম রেজা (ব্লাক বোর্ড), মো: মহিন উদ্দীন (পান্জাবী)।

১২ নং ওয়ার্ডে এম এ মনজুর (উটপাখি), মো: শহিদুল ইসলাম শহিদ (পান্জাবী), দিদারুল করিম (ডালিম), এনামুল কবির (টেবিল ল্যাম্প)।

এছাড়া সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদে যারা লড়ছেন তারা হলেন-

সংরক্ষিত আসন-১ (১,২,৩) থেকে শাহেনা আকতার ( আনারস) ও ফাতেমা বেগম (জবা ফুল)।

সংরক্ষিত আসন-২ (৪,৫,৬) ইয়াসমিন আকতার ( চশমা), রোকেয়া আকতার কেয়া,( আনারস) জেসমিন আকতার (টেলিফোন) হেলেনাজ তাহেরা (বলপেন), সাবেকুন্নাহার,( অটোরিকশা) চম্পা উদ্দিন (জবাফুল)।

সংরক্ষিত আসন-৩ (৭,৮,৯) মমতাজ বেগম (টেলিফোন), সুমা দাশ (আনারস), রোমেনা আফাজ (বলপেন), জাহেদা আকতার (চশমা), ছালেহা আকতার (জবাফুল), শাহিনা আকতার শাহিন (অটোরিকশা) ।

সংরক্ষিত আসন-৪ (১০,১১,১২) কোহিনুর ইসলাম (আনারস), নাছিমা আকতার (টেলিফোন)।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৪৫টি বুথে ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোন ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তন করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ৫ জন পুলিশ ও ১৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ঝুঁঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ২ জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। শহরে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরের পর থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে ৪ দিন তারা নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবির টহল টিমের সঙ্গে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রের প্রতিটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন পুলিশের ১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৩ জন কনস্টেবল ও ১২ জন আনসার সদস্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশের পৃথক টহল থাকবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা কক্সবাংলাকে জানান,পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রের ২৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। তিনি আরও জানান, নির্বাচনে ১২টি কেন্দ্রে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট,৩জন ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়া পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ইভিএমের এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, আশা করছি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমসহ নির্বাচন সামগ্রী প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাঠানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরায় স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবেন এমন ১ হাজার ২০০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটরসাইকেল। এ ছাড়া ভোটের দিন সীমিত থাকবে যন্ত্রচালিত যান চলাচল। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সব ধরনের মিছিলের ওপরও। সবার ভোট দেয়ার সুবিধার্থে ভোটের এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।

সারাদেশ-এর আরও খবর