ফরিদপুরের হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ, বেড়েছে মৃত্যুও

  বিশেষ প্রতিনিধি    30-01-2024    38
ফরিদপুরের হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ, বেড়েছে মৃত্যুও

গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে ফরিদপুরের হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। গত মাসের চেয়ে হাসপাতালে বেড়েছে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা।

ফরিদপুরের প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, জেলার তাপমাত্রা ‘অস্থিতিশীল’ অবস্থায় রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবযাত্রাসহ শিশুদের ওপর। গত ১২ জানুয়ারি ফরিদপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, ১৩ জানুয়ারি ১৩ ডিগ্রি ও ১৪ জানুয়ারি ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফরিদপুরে এবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ২৩ জানুয়ারি। এছাড়া অন্য সবদিনের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ২৩ এর মাঝামাঝি উঠানামা করছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতের তীব্রতা ফরিদপুরে আগামী ২/৩ দিন একইরকম থাকবে। ফরিদপুরে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয় মূলত তিনটি হাসপাতালে। এগুলো হলো, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ফরিদপুর ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসিপাতাল।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯২৩, জেনারেল হাসপাতালে ৪১১ এবং শিশু হাসপাতালে ১ হাজার ৬৬ জনসহ মোট ২ হাজার ৫০০টির মতো শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিকেলে ৭১টি, জেনারেল হাসপাতালে একটি ও শিশু হাসপাতালে ৩৬টিসহ মোট ১০৮টি শিশু মারা গেছে এই জানুয়ারি মাসে।

এদিকে গত ডিসেম্বরের ৩১ দিনে ফরিদপুর মেডিকেলে ৬০টি, শিশু হাসপাতালে ৩০টি শিশু মারা যায়। ওই মাসে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে কোনো শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। সেই হিসেবে, শিশু রোগীর পাশাপাশি শিশু মৃত্যুর হারও ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে বেশি দেখা গেছে।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, যে সব শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি, জন্মগত ত্রুটির পাশাপাশি ঠান্ডা ও নিউমোনিয়াও ছিল।

ফরিদপুর ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের রোগী কল্যাণ কর্মকর্তা রুবিয়া বেগম জানান, যেসব শিশু মারা যাচ্ছে এর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি, ফুসফুসের সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ রয়েছে।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় ফরিদপুরের সালথার বড়খারদিয়া গ্রামের এক বছরের শিশু ওসমান গণিকে। তার মা লিনা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ আগে ওসমান ঠান্ডা কাশিতে আক্রান্ত হয়। বাড়িতে তিন দিন রাখার পর গত চারদিন আগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়, মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার উপদুমুরশিয়া গ্রামের পাঁচ মাস বয়সী শিশু তাহমিদকে। তাহমিদের মা সুলতানা বেগম জানান, জ্বর ও কাশি হওয়ায় গতকাল সোমবার (২৯ জানুয়ারি) তিনি তার ছেলেকে নিয়ে এসেছেন।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) গনেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, শীতের তীব্রতা কমে গেলে শিশুদের ওপর নতুন করে আরেকটি ধাক্কা আসতে পারে। এজন্য আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রথমমত শিশুদের সারা শরীর গরম পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অহেতুক কারণে শিশুকে বাড়ির বাইরে আনা যাবে না। গোসল ও পান করার জন্য উষ্ণ পানি ব্যবহার করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল ও মাছ মাংস খাবার তালিকায় রাখতে হবে। এতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর